Breaking News
জুলাই ৩১, ২০২৫

কুড়িগ্রামের খলিলগঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজের বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ প্রতিষ্ঠানে না এসেই বেতন ভাতা উত্তোলন

মোঃ মাইনুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ

কুড়িগ্রামের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খলিলগঞ্জ স্কুল এন্ড কলেজের নিজ কক্ষে বসে মদপান ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তৎকালীন অধ্যক্ষ এস এম সালাহ উদ্দীন রুবেলকে সাময়িক বরখাস্ত করে গভর্নিং বডি। ২০২৪ সালের (৩১ মার্চ) কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি তৎকালীন রংপুর রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্সের কমান্ড্যান্ট (অতিরিক্ত ডিআইজি) মোঃ মেহেদুল করিম স্বাক্ষরিত পত্রে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। পৃথক আরেকটি পত্রে কলেজের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী অধ্যাপক মোঃ শহীদুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গভর্নিং বডির তৎকালীন সভাপতি মোঃ মেহেদুল করিম এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
বরখাস্তের আদেশে বলা হয়, ‘অধ্যক্ষ সালাহ উদ্দীন রুবেলের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানে বসে মদপান ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে বাংলা ট্রিবিউনসহ একাধিক গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পায় মর্মে প্রতিবেদন দেয়। একইসঙ্গে নৈতিক স্খলন পেশাগত অসদাচরণ, আর্থিক অনিয়ম-দুর্নীতি, কর্তব্যে অবহেলা ও অদক্ষতার অভিযোগের সত্যতা পায় তদন্ত কমিটি। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দাখিলকৃত জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত মোতাবেক চাকরিবিধি অনুযায়ী অধ্যক্ষ সালাহ উদ্দীন রুবেলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।
প্রসঙ্গত, সালাহ উদ্দীন রুবেল প্রতিষ্ঠানে বসে নিয়মিত মদপান করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বিধিবহির্ভূতভাবে কলেজের টাকা উত্তোলন ও আত্মসাতের অভিযোগ আছে। এ নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পায়। অধ্যক্ষ রুবেল মনগড়া ভাউচার ও চেকের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩৬ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন মর্মে প্রতিবেদন দেয় নিরীক্ষা কমিটি। এসব অভিযোগে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হলে স্বীকার করে জবাব দেন। সার্বিক বিবেচনায় রুবেলকে অধ্যক্ষ পদ হতে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেয় গভর্নিং বডি। গভর্নিং বডির তৎকালীন সভাপতি মোঃ মেহেদুল করিম বলেন, ‘অধ্যক্ষ সালাহ উদ্দীন রুবেলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ২০২৪ সালে ৫ই আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্রজনতার আন্দোলনের মুখে বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ তার মন্ত্রী পরিষদের অন্যান্য মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য দেশ থেকে পালিয়ে গেলে সময়ের পট পরিবর্তনে আওয়ামীলীগের জেলা কমিটির নেতা এস এম সালাহ উদ্দিন রুবেল পুরোপুরি কলেজে না এসে আত্মগোপনে থেকেও ইএফটি সিস্টেমে তার মাসিক ফুল বেতন ভাতা উত্তোলন করে আসছে। এ ঘটনায় খলিলগঞ্জ স্কুল এন্ড কলেজের বিভিন্ন শিক্ষক-কর্মচারীদের মাঝে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
এব্যাপারে খলিলগঞ্জ স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ড. মোঃ শহীদুল ইসলাম জানান, খলিলগঞ্জ স্কুল এন্ড কলেজের বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ সালাহ উদ্দিন রুবেলের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের ৪৪ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ সহ কলেজে বসে মদপানের বিষয়টি তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় আমরা বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানালেও এখনও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। তবে আমরা সবকিছুই নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে করেছি। বর্তমান ইএফটি সিস্টেমের কারণে বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ এস এম সালাহ উদ্দিন রুবেল তার বেতন ভাতা সুবিধা পাচ্ছেন।
এব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড দিনাজপুরের চেয়ারম্যান প্রফেসর মহাঃ তৌহিদুল ইসলাম জানান, আপনার কাছ থেকে বিষয়টি জানলাম, অভিযোগ থাকলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এব্যাপারে কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, সবে মাত্র যোগদান করেছি। অভিযোগের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *