
নিজস্ব প্রতিবেদক
সাবেক প্রধান বিচারপতি ও আইন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান এ বি এম খায়রুল হককে জুলাইয়ের এক হত্যা মামলায় কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। তবে সাবেক প্রধান এ বিচারপতির বিপক্ষে শত শত আইনজীবী থাকলেও পক্ষেই দাঁড়াতে দেখা যায়নি কোনো আইনজীবীকে।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) রাত ৮টা ১৫ মিনিটে তাকে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ছানাউল্ল্যাহর আদালতে কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় হাজির করা হয়।
এজলাসেও কানায় কানায় আইনজীবী ভরে যায়। এরপর তদন্ত কর্মকর্তা যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশ পরিদর্শক খালেদ হাসান আসামিকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি খোরশেদ আলম শুনানিতে বলেন, হাসিনার কৃতদাস ছিলেন এই খায়রুল হক। বিচার ব্যবস্থা ধবংস করে দিয়ে তিনবারের প্রধানের বেগম খালেদা জিয়াকে ঘর থেকে উচ্ছেদ করে দেন তিনি। আল্লাহর বিচার আছে। তাকেই আজ কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হলো। হাসিনার নামে যতো মামলা আছে তার বিরুদ্ধেও ততোগুলো দেখানো হবে। এরপর ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তার বিচার চান ও কারাগারে আটক রাখতে শুনানি করেন।
এছাড়া রাষ্ট্রপক্ষে ভারপ্রাপ্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আজিজুল হক দিদার আসামিকে কারাগারে আটক রাখার জোর দাবি জানান।
তিনি বলেন, আমরা লজ্জিত তার অধীনে ছিলাম। বিচার বিভাগ তার জন্য কলঙ্কিত। তিনি রায় জাল জালিয়াতি, খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে ঘর ছাড়া ও তার সাজা বৃদ্ধি করেন। তার জন্যই হাসিনা স্বৈরাচারী হয়েছে। তার জন্য জাস্টিসদের নাম শুনলে মানুষ থুতু দেয়। তার এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার যেন কেউ প্রধান বিচারপতি হলে তার কথা মনে করেন।
এসময় ৫-৬ জন আইনজীবী খায়রুল হকের বিরুদ্ধে শুনানি করেন। তবে এসময় কেউ সাবেক এ প্রধান বিচারপতির পক্ষে কোনো আইনজীবী দাঁড়াননি বা শুনানি করেননি। ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি খোরশেদ মিয়া আদালতকে বলেন, তিনি এমন ঘৃণিত। কোনো আইনজীবী তার পক্ষে দাঁড়ান নি।
এরপর বিচারক মো. ছানাউল্ল্যাহ বিএনপির আইনজীবীদের উদ্দ্যেশে বলেন, আপনারদের কথায় অনেক কিছুই উঠে এসেছে। আপনারা বলছেন, আগে আপনারা বিচারকদের সম্মান করতেন, শ্রদ্ধা করতেন। কিন্তু কিছু কারণে আপনারা শ্রদ্ধার জায়গা থেকে সরে এসেছেন।
বিচারক বলেন, মানুষের শ্রদ্ধা তার কর্মের মাধ্যমে অর্জন করতে হয়। কর্মের মধ্য দিয়েই ঘৃণা বা ভালোবাসা তৈরি হয়। এ ঘটনার (এবিএম খায়রুল হক) মধ্য দিয়ে অনেক কিছু শেখার আছে। আপনি যদি শ্রদ্ধা করেন সেটাও আমার কর্মের কারণে, আবার ঘৃণা করলেও সেটাও কর্মের জন্যও। শুনানি শেষে আদালত আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এতে করে প্রথম সাবেক কোনো প্রধান বিচারপতি কারাগারে গেলেন।
এদিকে শুনানি শেষে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের আসামিদের পক্ষে মামলায় দাঁড়ানো একজন আইনজীবী বলেন, আজ খায়রুল হকের পক্ষে দাঁড়ানোর মতো পরিস্থিতি ছিল না।
এদিকে এদিন সন্ধ্যা ৭ টা ৪৫ মিনিটে খায়রুল হককে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। ডিবির সাদা মাইক্রো গাড়িতে আনা হয় তাকে। এসময় গাড়ির সামনে ও পেছনে পুলিশের গাড়িতে কড়া নিরাপত্তা দিতে দেখা যায়। খায়রুল হককে আনার সঙ্গে সঙ্গে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের ‘খায়রুলের দুই গালে জুতা মারো তালে তালে’ স্লোগান দিতে দেখা যায়। এরপর গাড়ি হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
এরআগে এদিন বৃহস্পতিবার সকালে ধানমন্ডির বাসা থেকে খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এরপর তাকে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয় নেওয়া হয়।
মামলা সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৮ জুলাই যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকায় যুবদল কর্মী আবদুল কাইয়ুম আহাদ গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনাস্থলে তিনি মারা যান। এঘটনায় তার বাবা আলা উদ্দিন গত ৬ জুলাই যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করেন। মামলায় শেখ হাসিনাসহ ৪৬৭ জনকে আসামি করা হয়। এ মামলায় খায়রুল হককে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।