পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে ফের ভয়াবহ ভাঙন

শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকার রক্ষা বাঁধে ফের ভাঙন দেখা দিয়েছে। বুধবার গভীর রাতে হঠাৎ ১০০ মিটার বাঁধ নদীতে চলে গেছে। মঙ্গল মাঝিঘাট-সাত্তার মাদবর বাজারের কাছাকাছি এই ভাঙন এক রাতেই নিঃস্ব করে দিয়েছে বহু মানুষকে।

শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, গত নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত পাঁচবার বড় ভাঙন হয়েছে। ৭ জুন, ৭ জুলাই, ৯ জুলাই এবং সর্বশেষ ২৩ জুলাই—প্রতিবারই শত শত মিটার নদীতে বিলীন হয়েছে। জিও ব্যাগ ফেলেও ঠেকানো যাচ্ছে না ভাঙন। এরই মধ্যে ১ লাখ ৩২ হাজার জিও ব্যাগ ফেললেও ভাঙন থামানো যায়নি।
বুধবার রাতে পদ্মার ভাঙনে ১০টি দোকান সরিয়ে ফেলা হয়েছে। শেষ ১৫ দিনে এই নিয়ে প্রায় ৬০০ মিটার রক্ষা বাঁধ হারিয়ে গেছে নদীর গহ্বরে। তলিয়ে গেছে ৩৩টি দোকান, ১৫টি বাড়ি। আরও ৫০টি পরিবার নিজের ঘরবাড়ি নিজের হাতেই সরিয়ে নিচ্ছে।

ঝুঁকিতে রয়েছে সাত্তার মাদবর বাজারের ২৪০টিরও বেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আশপাশের গ্রামগুলোও বাদ যাচ্ছে না। আলম খারকান্দি, উকিল উদ্দিন মুন্সিকান্দি, ওছিম উদ্দিন মাদবরকান্দি গ্রামের প্রায় ৬০০ পরিবার এখন ‘নদীর মুখোমুখি’।
২০১২ সালে পদ্মা সেতুর নির্মাণের সময় যে বাঁধ তৈরি হয়েছিল, সেই বাঁধই এখন পদ্মার থাবায় একে একে হারিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ যে ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধ নির্মাণ করেছিল, তার বেশিরভাগ অংশ এখন বিলীন অথবা বিপন্ন।

মাঝিরঘাট পদ্মার পাড়ের মানুষ বলছেন, সেতু দিয়ে গাড়ি যাচ্ছে, কিন্তু পেছনের গ্রামগুলো ডুবে যাচ্ছে চুপচাপ। উন্নয়ন হয়েছে শহরে, দুর্ভোগটা রয়ে গেছে আমাদের ঘরে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী বাদশা শেখ বলেন, ‘ভাঙন আবার শুরু হয়েছে। দোকানপাট সরিয়ে নিচ্ছি। ২৫০ জনের বেশি দোকানদার এখন আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছেন। বাঁধ না থাকলে আমাদের ব্যবসার অস্তিত্বই থাকবে না।’

জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী রায় কালবেলাকে বলেন, ‘বাঁধ পুরোনো হয়ে গেছে, তাই জায়গায় জায়গায় দুর্বলতা দেখা দিচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে।’

জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান কালবেলা বলেন, ‘পানির উচ্চতা আর স্রোতের তীব্রতা এখন অতীতের চেয়েও ভয়ংকর। তাই কোথাও কোথাও বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। আমরা জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছি। তবে স্থায়ী বাঁধের জন্য একটি প্রকল্প জমা দেওয়া হয়েছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *