জামায়াতের জাতীয় সমাবেশ শুরু

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশ শুরু হয়েছে। শনিবার (১৯ জুলাই) দুপুর ২টায় কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সমাবেশের মূল পর্ব শুরু হয়।

এর আগে সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় সমাবেশের প্রথম পর্ব। পরবর্তীতে দুপুর সোয়া ১২টার দিকে সমাবেশস্থলে উপস্থিত হন দলটি আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি উদ্যানে প্রবেশ করলে রাস্তার দু’পাশে অবস্থান নেওয়া দলীয় নেতাকর্মীরা স্লোগানের মাধ্যমে তাকে স্বাগত জানায়।
এদিকে, সমাবেশকে কেন্দ্র করে নেতা-কর্মীদের ভিড় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছাড়িয়ে আশপাশের সড়ক পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই ভিড় বাড়ছেই।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশের সড়কে অবস্থান করছে কয়েকশ’ বাস। এসব বাসে জামায়াতের নেতা-কর্মীরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সমাবেশে যোগ দিতে এসেছেন। নেতা-কর্মীদের অনেকে জামায়াতের লোগো সংবলিত টি-শার্ট পরেছেন। কারও কারও মাথায় বাঁধা দলীয় ফিতা। কারও হাতে জাতীয় পতাকা, দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লা রয়েছে।


দলটির দায়িত্বশীল নেতারা জানান, আজকের সমাবেশে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় জনসমাগম ঘটবে। জামায়াতের উদ্দেশ্য—বড় ধরনের সমাবেশ করে রাজনীতির মাঠে নতুনভাবে আলোড়ন সৃষ্টি করা। সমাবেশ থেকে নতুন প্রজন্মের উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেবেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। গণহত্যার বিচার ও সংস্কার শেষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন এবং চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনার ভিত্তিতে জনআকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা; এ দুই বিষয়ে দলের প্রধান দিকনির্দেশনামূলক বার্তা দেবেন। পাশাপাশি সমাবেশের মূল মঞ্চে জামায়াতের সমাবেশে জাতীয় নেতা, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, কর্মপরিষদ সদস্য, বিভিন্ন দলের নেতা এবং জুলাইয়ের শহীদ পরিবারের প্রতিনিধিরা থাকবেন।

জামায়াতের দায়িত্বশীল নেতারা জানান, এরই মধ্যে সমাবেশ সফলভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দলের আমিরসহ শীর্ষ নেতারা ঢাকা মহানগরসহ দেশজুড়ে ব্যাপক গণসংযোগ, প্রস্তুতি সভা, মিছিল-সমাবেশসহ সাংগঠনিক তৎপরতা চালিয়েছেন। ১০ হাজারের মতো বাস এবং কয়েক জোড়া ট্রেন রিজার্ভ করা হয়েছে। লঞ্চেও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ শুক্রবার (১৮ জুলাই) সমাবেশের উদ্দেশে রওনা দেন। বিএনপিসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দলকে সমাবেশে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সেইসঙ্গে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের নেতাদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। জামায়াতের টার্গেট আজকের সমাবেশে ১৫ লাখ লোকসমাগম ঘটানো।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে যখন তীব্র বিতর্ক চলছে, সে সময়ে জামায়াতে ইসলামী ঢাকায় বিশাল সমাবেশ করতে যাচ্ছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এই সমাবেশে জামায়াত স্মরণকালের সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চাইছে। এরই মধ্যে ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে জামায়াতের প্রতিনিধিদল। বিপুল পরিমাণ লোকের গাড়ি পার্কিং, অজু-নামাজের ব্যবস্থা এবং টয়লেট স্থাপন, মেডিকেল বুথ স্থাপনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সব প্রস্তুতি শেষ করেছে জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটি।

জানা গেছে, এতদিন ঢাকার পুরানা পল্টন, বায়তুল মোকাররম, পল্টন ময়দানসহ রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় অতীতে অসংখ্য রাজনৈতিক কর্মসূচি করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কখনোই এককভাবে বড় সমাবেশ করেনি দলটি। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের মধ্যদিয়ে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলে গা-ঝাড়া দিয়ে ওঠেন দলটির কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা। আজ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ‘জাতীয় সমাবেশ’ করার মাধ্যমে নিজেদের সাংগঠনিক সক্ষমতা জানান দিতে চাইছে দলটি। এই সমাবেশে ভিন্ন বা বিশেষ কিছু রয়েছে বলে জানান জামায়াতের নেতারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *