
মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে জামায়াতে ইসলামী ঘটনাটিকে ‘রাজনৈতিক রূপ’ দিয়েছে বলে মনে করে বিএনপি। এতে দারুণভাবে ক্ষুব্ধ দলটি। বিএনপি মনে করছে, মূলত আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির ইমেজ ক্ষুণ্ন করতে জামায়াত নেতারা পরিকল্পিতভাবে নানান মিথ্যাচার ও অপপ্রচারে নেমেছেন। দলটির নেতারা বলছেন, একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ৫ আগস্টের পর যেখানে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যের ভিত্তিতে সামনে এগোনো দরকার, সেখানে ইসলামী দু-একটি দল রাজনীতিতে বিভেদ তৈরিতে কাজ করছে। এটি শুভ লক্ষণ নয়। তাই জামায়াতের সঙ্গে এবার ‘নির্বাচনী জোট’ গঠনের পরিকল্পনা না থাকলেও ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য অটুট রাখতে এবং দেশকে এগিয়ে নিতে দীর্ঘদিনের পুরোনো এই মিত্রের কাছ থেকে ‘রাজনৈতিক দলসুলভ’ আচরণ প্রত্যাশা করে বিএনপি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু কালবেলাকে বলেন, দেশ যখন নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন দু-একটি দল নানান কথা বলছে। নির্বাচন যাতে না হতে পারে, সেজন্য মিটফোর্ডের ঘটনা কেন্দ্র করে তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে। কিন্তু লাভ হবে না, দেশবাসী সজাগ রয়েছে। তিনি আরও বলেন, বিএনপির নেতৃত্বে যে ঐক্যের মাধ্যমে হাসিনাকে উৎখাত করা হয়েছিল, সেই দলের বদনাম করে, তাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়ে সেই ঐক্যকে যদি কেউ বিনষ্ট করে, তাহলে আন্দোলনে তো সেই দলের অবদান কোনো মূল্য বহন করে না। অনৈক্য সৃষ্টি করার অর্থ হলো যে, ফ্যাসিবাদ যারা ছিল, তাদের আবার ওয়েলকাম করা।
বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে ২৪ বছরের মিত্রতা। দীর্ঘ এই সময়ে সম্পর্কে উত্থান-পতন হলেও জোট ভাঙেনি। আওয়ামী লীগকে ঠেকাতে ১৯৯৯ সালে চার দলীয় জোট গঠিত হয়। এ জোটের প্রধান দুটি দল ছিল বিএনপি ও জামায়াত। ২০০১ সালে জোটবদ্ধ নির্বাচন করে সরকার গঠন করে। এরপর আবার বিরোধী দলে যায়। পরে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন জোরদার করতে চারদলীয় জোট সম্প্রসারণ করে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল ১৮ দলীয় জোট গঠন করে বিএনপি, যা পরবর্তী সময়ে ২০ দলীয় জোটে রূপান্তরিত হয়। ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করলেও ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে জোটবদ্ধভাবে অংশগ্রহণ করে বিএনপি। তবে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের গতি ও ব্যাপ্তি বাড়াতে ২০২২ সালের ৯ ডিসেম্বর অনানুষ্ঠানিকভাবে ২০-দলীয় জোট ভেঙে দেয় বিএনপি। পরবর্তী সময়ে জোটের দলগুলো বিভক্ত হয়ে ১২ দলীয় জোট এবং ‘জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট’ গঠিত হয়। তবে জামায়াত কোনো জোটে ছিল না। ওই বছরের ৩০ ডিসেম্বর থেকে বিএনপির নেতৃত্বে আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন আরম্ভ হলে শুরুতে দু-একটি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছিল জামায়াত। তবে পরে দলটি নিজস্ব কর্মসূচি নিয়ে এককভাবে আন্দোলনে রাজপথে সক্রিয় ছিল। এমনকি বিএনপির সঙ্গে তখন জামায়াতও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল।
এরপর গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিএনপি ও জামায়াত আলাদা পথে হাঁটতে শুরু করে। দুই দলেরই এখন লক্ষ্য আগামী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার গঠন করা। এমন অবস্থায় নানা ইস্যুতে দল দুটির মধ্যে প্রায়ই টানাপোড়েন দেখা যাচ্ছে। জামায়াত জাতীয় এর আগে স্থানীয় নির্বাচন এবং পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন চাইলেও এ ক্ষেত্রে বিএনপির অবস্থান সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী। দলটি আগে জাতীয় নির্বাচন এবং বিদ্যমান ব্যবস্থায় সেই জাতীয় নির্বাচন চায়। এমন টানাপোড়েনের মধ্যে সর্বশেষ মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে সম্পর্কের দারুণ অবনতি ঘটে। বক্তব্য-বিবৃতি ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একদল আরেক দলকে ঘায়েলে টার্গেট করে নানা ধরনের ক্যাম্পেইনে লিপ্ত হয়।