বাকেরগঞ্জের দুর্নীতিবাজ সাবেক মেয়র লোকমান হোসেন ডাকুয়ার অবৈধ হাজার কোটি টাকার মালিকের উৎস কোথায়?

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ-বাকেরগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন ডাকুয়া এক সময়ের একজন সাধারন মুরগির খামারি ছিলেন। সময়ের পরিক্রমায় তিনি এখন ‘হাজার কোটি টাকার মালিক’ হিসেবে এলাকায় পরিচিত। প্রশ্ন হচ্ছে, তার এই বিপুল অর্থসম্পদের উৎস কোথায়? রাজনীতির আদর্শিক পথ ধরেই কি এমন সম্পদের মালিক হওয়া সম্ভব, নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে ভয়ংকর দুর্নীতির ছায়া?প্রথম মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই শুরু হয় তার ক্ষমতার অপব্যবহার। পৌরসভার টেন্ডার থেকে শুরু করে উন্নয়ন বাজেটের বরাদ্দে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, রাস্তা নির্মাণ, ড্রেনেজ সিস্টেম ও সরকারি ভবন সংস্কারের নামে কাগজে-কলমে কাজ দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি।শুধু অর্থ নয়, তার বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগও একাধিক। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, বিভিন্ন গরীব ও প্রবাসীদের জমি ভয়ভীতি দেখিয়ে দখল করে সেখানে মার্কেট, বাসাবাড়ি নির্মাণ করেছেন। তার নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসী চক্র চাঁদাবাজি এবং সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মাধ্যমে পুরো বাকেরগঞ্জে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল।উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েই ১৪ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় পকেট কমিটি দিয়ে হাতে নিয়েছে কোটিকোটি টাকা। অবৈধপথে অর্জিত টাকায় তিনি শুধু নিজেই বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন না, বরং পরিবারের সদস্যদের নামেও কোটি কোটি টাকার ফ্ল্যাট, জমি, গাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকানা অর্জন করেছেন। অথচ তার কোনো আয়কর ফাইল বা বৈধ আয়ের উৎস এখনো জনসমক্ষে আনতে পারেননি।অন্যদিকে, ২০২২ সালে বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর হামলার ঘটনায় তার বিরুদ্ধে সশস্ত্র হামলা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগও রয়েছে। এমনকি রাজনৈতিক বিরোধীদের ফাঁসাতে মিথ্যা মামলা দায়েরের পেছনেও তার ইন্ধনের অভিযোগ রয়েছে। এসব ঘটনা তাকে শুধু একজন দুর্নীতিবাজ নয়, বরং একজন রাজনৈতিক হিংস্রতায় ভরপুর চরিত্র হিসেবে পরিচিত করেছে।আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনামলে দলীয় কোন এমপি না থাকায় তিনি এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান,মেয়র আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে বাকেরগঞ্জে এক ছাত্র সন্ত্রাস,চাঁদাবাজ, লুটপাট, জবরদখল সহ নানান কিসিমের অপকর্মের মূল হতা হিসেবে গডফাদারের দায়িত্ব পালন করিয়া মুরগির ব্যাপারী থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন এবং তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের বিভিন্ন প্রকারের মিথ্যা মামলা দিয়ে এলাকা থেকে ভিটা মাটি ছাড়া করিয়েছেন বলে একাধিক এলাকাবাসীর সূত্রের মাধ্যমে জানা যায়। সরকারি প্রকল্পে অনিয়ম, ত্রাণসামগ্রী চুরিসহ করোনাকালীন ত্রাণ বরাদ্দেও তার বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতির টাকায় তিনি তৈরি করেছেন একাধিক ভবন, যানবাহন ও ব্যাংক একাউন্ট, যার কোনোটির উৎস দেখাতে পারেননি।স্থানীয় লোকজনের দাবি, তার এত সম্পদের মূল উৎস হলো রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে প্রতারণা, চাঁদাবাজি, কমিশন বাণিজ্য ও সরকারি ফান্ড আত্মসাৎ। একাধিকবার দুর্নীতির তদন্ত হলেও রহস্যজনক কারণে তার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।এক সময় যিনি ছিলেন একজন মুরগির খামারি, সেই লোকমান ডাকুয়া কীভাবে অল্প সময়ের ব্যবধানে ‘হাজার কোটি টাকার মালিক’ হলেন, সেটি আজ একটি জাতীয় প্রশ্ন। শুধু রাজনৈতিক পরিচয় থাকলেই কি এত টাকা অর্জন সম্ভব? নাকি এর পেছনে রয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেটের আশ্রয়-প্রশ্রয়?বাকেরগঞ্জবাসী আজ এই প্রশ্নের জবাব চায়। তারা চায় দুর্নীতিবাজদের বিচারের আওতায় এনে সম্পদের হিসাব প্রকাশ করা হোক। প্রশাসনের উচিত অবিলম্বে তার সম্পদের উৎস তদন্ত করা এবং কোনো অনিয়ম থাকলে তাকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া।
কারণ দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুধু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নয়, নিজেদের দলীয় দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধেও হওয়া উচিত। নচেত, মানুষের আস্থা হারাবে দল, নেতৃত্ব এবং সর্বোপরি গণতন্ত্র।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *