Breaking News
জুলাই ২৮, ২০২৫

কুড়িগ্রাম জেলা ডিসি নুসরাত সুলতানার জরুরী নির্দেশনায়কুড়িগ্রাম পৌরসভাকে জলজট মুক্ত করার উদ্যোগ

মোঃ মাইনুল ইসলাম
কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানার জরুরী নির্দেশনা ও তার তত্ত্বাবধানে ২৭.২ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের কুড়িগ্রাম পৌরসভাকে জলজট মুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করছেন।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে- ১৯৭২ সালে কুড়িগ্রাম পৌরসভা প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর এ পর্যন্ত পৌরসভার ভিতর ৫০ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। যুগের পর যুগ ধরে নির্মিত ড্রেনগুলির প্রয়োজনীয় সংস্কার না করায় অধিকাংশ ড্রেন ভঙ্গুর অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কিছু ড্রেনের উচ্চতা রাস্তার থেকে নিচু হওয়ায় ড্রেনগুলি বিভিন্ন ধরনের আবর্জনা এবং মাটি দিয়ে ভরাট হয়েছে। এছাড়াও ড্রেনগুলির উপর অবৈধ স্থাপনা গড়ে ওঠায় ড্রেনগুলি নিয়মিত পরিষ্কার করা যাচ্ছে না। এমন আরো নানামুখী পুঞ্জিভূত সমস্যার কারণে একটু বৃষ্টি হলেই পৌর এলাকার অধিকাংশ অফিস, আদালত, পাড়া মহল্লা সহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। এতে ভোগান্তির শিকার হয় পৌরসভার সকল ধরনের লোকজন।

তাই সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে- জনদুর্ভোগের এই বিষয়টি কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানার নজরে আসলে তিনি সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের জন্য অধিকতর তৎপর হয়ে ওঠেন। ইতোমধ্যে ড্রেন সংস্কার এবং প্রয়োজনীয় নতুন ড্রেন নির্মাণের জন্য ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকার বরাদ্দ আসে। তাই বরাদ্দ প্রাপ্ত এই অর্থ দ্বারা সার্কিট হাউস থেকে টিটিসির মোড় পর্যন্ত, কলেজ মোড় থেকে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস পর্যন্ত ভায়া সরকারী মহিলা কলেজ, পলিটেকনিক কলেজ মোড় হতে বালাটারী রেললাইন পর্যন্ত মোট ১ দশমিক ৩২৮ কিলোমিটার ড্রেনের কাজ করা হবে। এরমধ্যে শূন্য দশমিক ৭৭৮ কিলোমিটার নতুন ড্রেন নির্মাণ এবং শূন্য দশমিক ৫৫০ কিলোমিটার পুরাতন ড্রেন সংস্কার করা হবে। এই কাজ বাস্তবায়ন হতে সময় লাগবে নূন্যতম ৬ মাস লাগতে পারে। কাজটি বাস্তবায়ন হলে মাঝারি কিংবা ভারী বৃষ্টিপাতে জেলা প্রশাসক কার্যালয় এবং তার আশপাশ এলাকায় আর জলজটের সৃষ্টি হবে না।
সূত্র জানায়- উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভঙ্গুর ড্রেন সংস্কার এবং প্রয়োজনীয় নতুন ড্রেন নির্মাণের জন্য আরো প্রায় বিশ কোটি টাকার বরাদ্দ আসার সম্ভাবনা রয়েছে। মোদ্দা কথা আগামী এক বছরের মধ্যে ড্রেনেজ সমস্যার স্থায়ী সমাধান আসবে বলে সূত্রটি আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।
সূত্রটি আরো জানায়- “রংপুর বিভাগের ৯ পৌরসভার ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের” আওতায় কুড়িগ্রাম পৌরসভার অনুকূলে ১০০ কোটি টাকার বরাদ্দ রয়েছে। আগামী ২০২৬ সালের ৩১শে ডিসেম্বর প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করার টার্গেট নেয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় কুড়িগ্রাম পৌরসভা এলাকার ড্রেন, সড়ক এবং বাজার উন্নয়নের কাজ করার কথাও রয়েছে।

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মাহমুদুন্নবী জানান-আপাতত তিনটি ড্রেনের কাজ করা হবে। এর পর পর্যায়ক্রমে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ড্রেনের সংস্কারের কাজ করার উদ্যোগ রয়েছে।
কুড়িগ্রাম পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকুর রহমান বলেন- কুড়িগ্রাম পৌরসভার ড্রেনের সমস্যাগুলো আমরা চিহ্নিত করতে পেরেছি। খুব শীঘ্রই সমাধানে আসবে।

কুড়িগ্রাম পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী বলেন- আমাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে ড্রেনের উপর অবৈধ স্থাপনাগুলি। অবৈধ স্থাপনাগুলি সরিয়ে নেয়ার জন্য তাদেরকে আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে যদি কাজ না হয় তাহলে আমরা উদ্যোগ নিয়ে অবৈধ স্থাপনাগুলি সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবো।
কুড়িগ্রাম পৌরসভার নবাগত প্রশাসক মো: আসাদুজ্জামান বলেন- ইতোমধ্যে ডিসি স্যারের সাথে আমাদের একটি সভা হয়েছে। ওই সভায় ড্রেনের সমস্যাগুলি নিয়ে কথা হয়েছে। ডিসি স্যারের দিকনির্দেশনা মেনে ড্রেনের সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা দ্রুত গতিতে কাজ এগিয়ে নিচ্ছি। আমাদের কাজ শেষ হলে পৌরসভার নাগরিকদের আর জলজটের ভোগান্তি থাকবে না।
এ বিষয়ে সর্বশেষ কথা হয় কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা সাথে। তিনি বলেন- ড্রেনের কাজ দেখ ভালো করার দায়িত্ব পৌরসভার। তথাপি আমি দায়িত্ব নেবার পর থেকে দেখে আসছি বৃষ্টি হলেই আমাদের অফিস সহ বিভিন্ন জায়গা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য আমি পৌরসভার প্রশাসক সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে আলোচনা করেছি। এছাড়াও গভীর রাতে ঘুরে ঘুরে আমি নিজে ড্রেনের সমস্যাগুলি দেখেছি। আমার কাছে মনে হয়েছে ড্রেনের এই সমস্যা অনেক পুরনো। আমি তৎপর হয়ে প্রয়োজনীয় মনে করে এই ড্রেন সংস্কারের জন্য অর্থের বরাদ্দ নিয়ে এসেছি। খুব শীঘ্রই নতুন ড্রেন নির্মান এবং পুরাতন ড্রেনের সংস্কার কাজ করা হলে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান মিলবে বলে আমি আশাবাদী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *