Breaking News
এপ্রিল ২৪, ২০২৫

আদালতে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ

পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি :

জোরপূর্বক জমি দখলে ব্যর্থ হয়ে দ্রুত বিচার আইনে আদালতে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে জমির আলী খা (৬২) নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার পানপট্টি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড তুলাতলী গ্রামে।

ভুক্তভোগী শাহআলম খা জানান, তাদের দীর্ঘদিনের ভোগদখলীয় জমি জোরপূর্বক দখলে ব্যর্থ হয়ে প্রতিপক্ষ জমির আলী খা আদালতে সাজানো মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। তার সাথে একটি প্রভাবশালী চক্রও ষড়যন্ত্রে জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

ভুক্তভোগীরা জানান, জে.এল. নং ১২৪, তুলাতলী মৌজার এস.এ. খতিয়ান নং ১৩ অনুযায়ী রেকর্ডীয় মালিক এন্তাজ আলী খা। তার অংশ পটুয়াখালী ১ম মুনসেফ আদালতের ১৯৫৫ সালের ৩৪নং পেটি মোকদ্দমায় ডিগ্রিপ্রাপ্ত (ডিগ্রি নং ৬১/৫৬) জমি আদালতের আদেশে নিলামী হয়। যা আদালতের রায়ে ১৯৫৭ সালের ১১ মার্চ ক্রয় করেন আব্দুর রব হাওলাদার। এরপর ১৯৬৬ সালে তিনি মোছলেম আলী খা-কে জে এল নং ১২৪ তুলাতলী মৌজার এস এ খতিয়ান নং ১৩ এর ২৩২, ৫৪২, ৫৪৩, ৫৪৪, ৫৪৫,৫৪৬,৫৪৭, ৫৪৮ ও ৫৪৯ এই সকল দাগ থেকে ৭৮ শতাংশ জমি বিক্রি করেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে ওই জমি ভোগদখল করে আসছিলেন। বর্তমানে তার উত্তরাধিকারগণ উক্ত জমিতে ভোগদখল করছেন।

ভুক্তভোগীদের দাবি, গত ২৩ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে সকাল ১০টার দিকে জমির আলী খা জোরপূর্বক জমি দখলের অপচেষ্টা চালান। দখলে ব্যর্থ হয়ে একই দিনে তিনি পটুয়াখালী দ্রুত বিচার আইনে আদালতে মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-৩৩/২০২৫)। মামলায় মোছলেম আলীর পুত্র মোয়াজ্জেম খা, শাহআলম খা, নুর আলম খা।এছাড়াও মামুন মৃধা, শামীম খা, তুহিন খা, নবীন খা এবং শিফন খা-কে আসামি করা হয়। মামলায় অভিযোগ আনা হয় যে, আসামিরা জোরপূর্বক জমিতে মাটি কেটে ঘর নির্মাণ করেছেন। মামলায় আইন শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন দ্রুত বিচার আইন ২০০২ এর (২) (ই) (উ) ৪/৫ ধারা উল্লেখ করা হয়।

তবে স্থানীয় বাসিন্দা ও ভুক্তভোগীরা জানান, মামলার দিনে ও সময় তারা নিজ বাড়িতে ও কর্মস্থলে স্বাভাবিক জীবনযাপন, কাজ করছিলেন এবং কোনো বিশৃঙ্খলা ঘটেনি। বরং প্রতিপক্ষ জমির আলী খা তাদের জমিতে বারবার অনধিকার প্রবেশের চেষ্টা করছেন এবং তাদের ঘর নির্মাণে বাঁধা দিচ্ছেন। এছাড়া যাদের আসামি করা হয়েছে তারা ঘটনাস্থলেই ছিলেননা। তাদের দাবি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হয়রানি করতেই এই মামলা সাজানো হয়েছে। আদালতের কাছে সুষ্ঠু তদন্ত, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং ভোগদখলীয় সম্পত্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তুহিন খা বাড়ি করে সেখানে গাছ রোপণ করে, পুকুর খনন করে ছোট্ট একটি টিন কাঠের ঘরে বসবাস করছে। ভিটিতে পড়ে আছে ঘর তোলার টিন,কাঠসহ নির্মাণসামগ্রী।

প্রতিবেশী দীপক দত্ত ও মোস্তফা তালুকদারসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, শাহআলম খা ও তার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে ওই জমিতে ভোগদখল করে আসছেন। গত বছর শাহআলম খা-এর ছেলে তুহিন সেখানে বাড়ির ভিটা তৈরি, পুকুর খনন ও গাছপালা রোপণ করেন। এবার ঘর নির্মাণ করতে গেলে জমির আলী খা বাঁধা দেন। তাদের দাবি, জমির আলী কখনো উক্ত জমির দখলে ছিলেন না।

শাহআলম খা বলেন, আমার বাবা ১৯৬৬ সালে জমি ক্রয় করেছিলেন। তখন থেকেই আমরা ভোগদখলে আছি। এখন হঠাৎ এসে তারা বাধা দিচ্ছে, মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। স্থানীয়ভাবে সালিসিতে, আদালতে আমাদের কাগজপত্র, দলিল স্বত্ব সঠিক হয়েছে।

তুহিন বলেন, আমি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কষ্টে ছাপড়া টিন কাঠের ঘরে আছি। নতুন ঘর তুলতে গেলে বাধা দেয়, এখন আবার মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। আমরা ন্যায়বিচার চাই।

মামলার বাদী জমির আলী খা বলেন, ওই জমি আমাদের ওয়ারিশী সম্পত্তি। প্রতিপক্ষরা জোরপূর্বক দখল করে ঘর নির্মাণের চেষ্টা করেছে। বাধা দিলে আমাদের হুমকি দেওয়া হয়। তাই বাধ্য হয়ে আইনের আশ্রয় নিয়েছি। মামলার সাক্ষী বশির খা বলেন, প্রায় শত বছর আগে ওই জমির দখল নিয়েছে শাহ আলম খা পরিবার।

এদিকে মামলাটি আমলে নিয়ে আদালত গলাচিপা থানাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই কামাল হোসেন বলেন, আদালতের নির্দেশে ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করেছি। তদন্ত প্রতিবেদন শীঘ্রই দাখিল করা হবে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, উক্ত জমিতে পূর্ব থেকে এবং বর্তমানে ভোগদখলে আছেন শাহআলম খা ও তার পরিবার।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।