স্টাফ রিপোর্টার বরিশাল।।
বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার ২নং চরাদী ইউনিয়নে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী বলইকাঠি গ্রামের মৃত কালু শিকদারের ছেলে জাহিদ এখনো রয়ে গেছেন বহাল তবিয়তে। এই ইউনিয়নে যেখানে অপরাধ সংগঠিত হয় সেখানেই সম্পৃক্ততা রয়েছে এই জাহিদের।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতার আমলে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জেলা পরিষদের সদস্য ইমাম হোসেনে মোল্লার ছাত্র ছায়া থেকে ইউনিয়নের বলাইকাঠি, মকিমাবাদ এলাকায় জাহিদ গড়ে তুলে অপরাধের স্বর্গরাজ্য। জাহিদের এই অপরাধ জগতের রয়েছে ভয়ংকর সিন্ডিকেট। এমন কোন অপরাধ নাই এই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ না করে। এই জাহিদের রয়েছে সঙ্ঘবদ্ধ সন্ত্রাসী বাহিনী। এই বাহিনী এলাকায় চাঁদাবাজি বিভিন্ন রকম সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছে দীর্ঘদিন থেকে। জাহিদ অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি নিজেই নিয়ন্ত্রণ করেন তার মাদকের রাজ্য। তার মাদক ব্যবসায় রয়েছে একাধিক সিন্ডিকেট। জাহিদ ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থান থেকে মাদক ক্রয় করে বরিশালে নিয়ে আসে। সেই মাদক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সরবরাহ করেন বরিশার জেলা শহরসহ নিজ এলাকা ও বাকেরগঞ্জ উপজেলা শহরসহ পার্শ্ববর্তী জেলা পটুয়াখালীর বিভিন্ন উপজেলাতে। জাহিদ নিজে মাদক সরবরাহ করতে গিয়ে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিল সহ দপদয়িয়া ব্রিজে পুলিশের হাতে আটক হয়। ওই মাদক মামলায় দীর্ঘদিন কারাবরণ করেন জেল থেকে জামিনে বের হয় জাহিদ। যেই মামলায় মামলায় জজ আদালত জাহিদকে যাবজ্জীবন সাজা দিলে পরবর্তীতে হাইকোর্টে আপিল করে আবারো জামিন নিয়ে পুনরায় মাদক ব্যবসা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। এছাড়াও একাধিক বার মাদক নিয়ে জাহিদ গ্রেফতার হন।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাবেক মহিলা সংরক্ষিত আসনের এমপি পারভিন তালুকদারের স্বামী ফারুক তালুকদার আওয়ামী লীগের নমিনেশন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। সেই নির্বাচনে জাহিদ চরাদি ইউনিয়নে ওই স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা চালিয়ে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে ওই নির্বাচন পরিচালনা করে।
এছাড়া ২০২৪ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহমেদ তালুকদার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়। ওই নির্বাচনে চরাদি ইউনিয়নে যুবলীগ নেতা রাজিব আহমেদ তালুকদারের পক্ষে জাহিদ প্রকাশ্যে নির্বাচনী মাঠে প্রচার প্রচারণা চালায়। জাহিদ দীর্ঘদিন থেকে চরাদি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রত্যেকটা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে আসছে।
৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে কিছুদিনের জন্য জাহিদ আড়ালে চলে যায়। কিছুদিন পরেই স্থানীয় বিএনপি'র কয়েকজন নেতাকর্মীদের ম্যানেজ করে পূর্বের ন্যায় সে তার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও মাদক ব্যবসা শুরু করেন (বাউফল উপজেলার কালিশুরী) গ্রামের চিহ্নিত ডাকাত একাধিক ডাকাতি মামলার পলাতক আসামি "কালা বাবুল" কে তার সাথে বডি গার্ড হিসেবে রেখে। হঠাৎ করে আওয়ামী লীগ খোলস পাল্টে বিএনপি হয়ে যায়। বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে আবার শুরু হয় তার বিভিন্ন রকমের অপকর্ম এমন পরিস্থিতিতে দলের ভাব ভর্তি নষ্ট হওয়া শুরু করলে চরাদি ইউনিয়ন বিএনপি সদস্য সচিব এডভোকেট মো: জাকির হোসেন গত ৩ এপ্রি একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানান, বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার ২নং চরাদী ইউনিয়ন শাখার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিেনপি ) ও যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল এবং অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের সাথে মোঃ জাহিদ সিকদার এর কোন সংশ্লিষ্টতা নাই। এমনকি বিএনপির কোন সদস্য পদও সে বহন করে না। বিগত ১লা এপ্রিল-২০২৫ রোজ মঙ্গলবার বিকাল ৫:১৫ মিনিটে ফারুক মল্লিকের সাথে মারামারির ঘটনা জাহিদের ব্যক্তিগত ব্যপার। উক্ত ঘটনার সাথে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন দলের কোন ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা নাই। ব্যক্তি জাহিদ সিকদারের কোন ঘটনার দায় দায়িত্ব চরাদী ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন নিবে না। ব্যক্তি জাহিদ সিকদারের কোন ঘটনার সাথে ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে চরাদী ইউনিয়ন বিএনপি সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে ওই বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ করেন।
এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরের দিন চরাদি ইউনিয়ন বিএনপি আহবায়ক এইচ এম ফরিদুল ইসলাম মোঃ জাহিদ সিকদারকে ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্যপদ প্রদান করেন। এই ঘটনা এলাকার তৃণমূল বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা দ্রুত সময়ের মধ্যে জাহিদ শিকদার কে চরাদি ইউনিয়ন বিএনপির আহবায় কমিটির সদস্য থেকে অপসারণের দাবি জানিয়েছে।