Breaking News
মার্চ ১৩, ২০২৫

মিঠুন পাল, পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি

পটুয়াখালীর গলাচিপায় জমি নিয়ে বিরোধের জেরে চাচার হাতে খুন হয়েছেন ভাতিজা শামিম মিয়া (৩০)। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন তার বাবা অজেদ সিকদার (৫৫) ও বড় ভাই রেজাউল ইসলাম (৩২)। আহতদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন স্বজনরা।

গত বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টায় উপজেলার রতনদী তালতলী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড গ্রামারোদন গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় শামিমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৭টায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। নিহত শামিম পেশায় একজন অটোরিকশা চালক। তার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তার দুই নাবালক সন্তান—জুনায়েদ (৪) ও জুম্মান (দেড় বছর)—এতিম হয়ে গেল।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে কুদ্দুস সিকদার ও অজেদ সিকদারের মধ্যে বাড়ির জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। অজেদ সিকদার সম্প্রতি আদালতের মাধ্যমে ওই জমিতে ঘর তুলতে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ১৪৪ ধারা জারি করেন। তবে কুদ্দুস সিকদার আদালতের আদেশ অমান্য করে জোরপূর্বক ঘর তোলা শুরু করলে অজেদ সিকদার থানায় অভিযোগ করেন।

পুলিশ এসে ঘর তোলার কাজ বন্ধ করে দিলেও কুদ্দুস সিকদার নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে আবারও ঘর তুলতে গেলে বাধা দেন অজেদ সিকদার। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে কুদ্দুস সিকদার (৫৫), তার ছেলে এনামুল সিকদার (২৬) ও স্ত্রী রেহেনা বেগম (৪০) মাটি কাটার কোদাল ও লাঠিসোঁটা নিয়ে অজেদ সিকদারের ওপর হামলা চালায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রথমে তারা অজেদ সিকদারকে মারধর করলে তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন তার দুই ছেলে শামিম ও রেজাউল। তখন তাদেরও এলোপাতাড়ি পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। হামলায় তিনজনই শরীরের বিভিন্ন অংশে ও মাথায় মারাত্মকভাবে আহত হন।

স্বজনরা আহতদের উদ্ধার করে গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে ওইদিনই বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে সেখান থেকে শামিমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সকালে তিনি মারা যান। এদিকে রেজাউল ও অজেদ সিকদারও মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। তাদের অবস্থা আশংকাজনক।

এ ঘটনার পর অভিযুক্ত কুদ্দুস সিকদার, এনামুল সিকদার ও রেহেনা বেগম পলাতক রয়েছেন। তবে তাদের গ্রেফতারে পুলিশের একাধিক দল অভিযান চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন গলাচিপা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সৈয়দুজ্জামান ও থানার ওসি মো. আশাদুর রহমান।

নিহত শামিমের স্ত্রী আয়শা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার দুই ছোট বাচ্চা এখন এতিম হয়ে গেল! আমার স্বামীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। আমি দোষীদের কঠোর শাস্তি চাই!”

রেজাউলের স্ত্রী খাদিজা বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা পুলিশের সহযোগিতা নিয়েছিলাম, পুলিশ কাজ বন্ধও করিয়েছিল। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হলো না। কুদ্দুস সিকদার ও তার ছেলে পরিকল্পিতভাবে আমার দেবরকে মেরে ফেলল। আমার স্বামী ও শ্বশুরের অবস্থাও ভালো না।”

গলাচিপা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আশাদুর রহমান বলেন, “এ ঘটনায় মামলা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পটুয়াখালী আনা হচ্ছে। জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। দ্রুতই আসামিদের আইনের আওতায় আনা হবে।”

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।