Breaking News
জুলাই ২২, ২০২৫

কৃষি শিক্ষক থেকে বনে গেছেন গণিত শিক্ষক, খুলে বসেছেন কোচিং বাণিজ্য 

মিঠুন পাল,পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি 

পটুয়াখালীর গলাচিপায় দক্ষিণ বাউরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. শাখাওয়াত হোসেন কৃষি শিক্ষক থেকে বনে গেছেন গণিতের শিক্ষক। অতিরিক্ত আর্থিক সুবিধাভোগের জন্য খুলে বসেছেন কোচিং বাণিজ্য। গণিত বিষয়ের শিক্ষক না হয়েও শিক্ষার্থীদের গাইডবই দেখে অঙ্ক শেখাচ্ছেন ওই শিক্ষক। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দৃষ্টি আকর্ষণে ‘এসো পড়াশোনা করি’ নামে ফেইসবুক পেইজ খুলে চালিয়ে যাচ্ছেন কোচিং এর প্রচারণা। কোচিং মালিক শাখাওয়াত হোসেন নিজে ও ২জন শিক্ষক বেতন দিয়ে রেখে নিয়মিত ব্যাচ করে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করান। যদিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকদের কোচিং ব্যবসা নিষিদ্ধ করে ২০১২ সালে ‘কোচিং বাণিজ্য বন্ধের নীতিমালা’ জারি করে সরকার। এই প্রতিবেদন তৈরির এক অনুসন্ধানে রেরিয়ে এসেছে চমকপ্রদ বেশ তথ্য। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শাখাওয়াত হোসেন গলাচিপা পৌরসভার ৯নম্বর ওয়ার্ডে গলাচিপা সরকারি কলেজের পাশে ২০২৩ সালে কোচিং চালু করে। সেখানে দুইটি রুম ভাড়া নিয়ে দুই বছর ধরে লোকচক্ষুর আড়ালে কোচিং সেন্টার চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি নিজে ও আরও দুইজন শিক্ষক বেতন দিয়ে রেখে সব বিষয়ে শিক্ষার্থীদের কোচিং এ পড়ান। তিনটি ব্যাচ করে প্রায় ৫০ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে জন প্রতি ২০০০ টাকা বেতন আদায় করেন তিনি। সূত্র আরও জানায়, প্রতিদিন বিকাল ৪ টা থেকে কোচিং শুরু হয়ে চলে রাত ৮ টা পর্যন্ত। শাখাওয়াত হোসেন আমখোলা ইউনিয়নের দক্ষিণ বাউরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কৃষি বিষয়ের সহকারী শিক্ষক। নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত শিক্ষকদের উপস্থিত থাকতে হয়। সেখানে স্কুল ফাঁকি দিয়ে এসে প্রতিদিন বিকাল ৪টায় কোচিং এ ক্লাস নেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তার অসৌজন্যমূলক আচরণের জন্য ইতোমধ্যেই কোচিং ছেড়েছে অনেক শিক্ষার্থী। সেখানে প্রায়ই ঘটছে বিভিন্ন ঘটনা। হাতেগোনা কিছু প্রকাশ পেলেও অধিকাংশই থাকছে আড়ালে। এদিকে শিক্ষকতা পেশার বাইরেও নামে বেনামে বিভিন্ন কোম্পানির ঔষধ এনে ব্ল্যাকে বিক্রি করেন ওই শিক্ষক। যা নিয়ে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন মহলে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তার এমন কর্মকাণ্ড জন্ম দিয়েছে আলোচনা সমালোচনা। এদিকে উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয় যেমন গণিত, ইংরেজি ও বিজ্ঞান পড়ানোর জন্য বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক অর্থাৎ যে সব শিক্ষক এ বিষয়গুলোতে অনার্স কিংবা মাস্টার্স করেছেন তাদেরই পড়ানোর কথা। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক না হওয়ার কারণে এ ঘাটতির প্রভাব স্বভাবতই শিক্ষার্থীদের শিখনফলে পড়ে।

কোচিং এর বিষয় জানতে চাইলে অস্বীকার করেন শাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রাইভেট পড়াই। কিন্তু দু’জন শিক্ষক বেতন দিয়ে রাখার বিষয় প্রশ্ন করলে তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি।

দক্ষিণ বাউরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শাহ আলম বলেন, সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী কোচিং সেন্টার চালাতে পারে না। সে কোচিং খুলেছে কিনা এ বিষয় জানা নাই। 

উপজেলা অ্যাকাডেমিক সুপারভাইজার আবুল কালাম সাঈদ বলেন, আইনগতভাবে কোচিং সেন্টার খোলার অনুমতি নাই। আমরা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মিজানুর রহমান বলেন, আমি শুনেছি এ কোচিং সেন্টারে একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা অনুসারে, কোনো শিক্ষক বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গড়ে ওঠা কোচিং সেন্টারে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত হতে পারেন না। নিজে কোচিং সেন্টারের মালিক হতে পারেন না। শিক্ষার্থীদের কোচিংয়ে পড়তে উৎসাহিত, উদ্বুদ্ধ বা বাধ্য করতেও পারেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *